রক্ত একপ্রকার বিশেষায়িত তরল যোজক কলা। রক্তের উপাদান ২টি, যথা-
- রক্তরস
- রক্তকণিকা
রক্তকণিকা:
মানবদেহের রক্তে ৩ প্রকার রক্তকণিকা বিদ্যমান। যথা-
লোহিত রক্তকণিকা
লোহিত রক্তকণিকার জন্য রক্তের রঙ লাল হয়। লোহিত রক্তকণিকাতে হিমোগ্লোাবিন নামক লাল রঞ্জকের উপস্থিতির জন্য এটি লাল হয়। লোহিত কণিকায় কোন নিউক্লিয়াস থাকে না।এটি দেখতে দ্বিঅবতল চাকতির মতো। এর আয়ুষ্কাল প্রায় ১২০ দিন। রক্তে লোহিত কণিকা সবথেকে বেশি পাওয়া যায়। এর সংখ্যা প্রায় ৪.৫ থেকে ৬.৫ মিলিয়ন ৯ ( প্রতি মি.লি. তে )
হিমোগ্লোবিন: হিমোগ্লোবিন হল হিম ও গ্লোবিন নামক ২টি আলাদা জৈব পদার্থের সন্নিবেশ। গ্লোবিন হল একপ্রকার আমিষ। আর হিম লৌহ দ্বারা গঠিত। লোহিত কণিকায় হিমোগ্লোবিন ৯৭% অক্সিজেন পরিবহন করে।
লোহিত রক্তকণিকার কাজ: ফুসফুসে গৃহীত অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিনরূপে সমগ্র দেহে সঞ্চালিত হয়। আবার, দেহকোষে উৎপাদিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডও লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে সমগ্র দেহকোষ থেকে ফুসফুসে সঞ্চালিত হয়।
শ্বেত রক্তকণিকা
মানবদেহে ৫ প্রকার শ্বেত রক্তকণিকা উৎপন্ন হয়। যথা-
- লিম্ফোসাইট
- মনোসাইট
- নিউট্রোফিল
- ইউসিনোফিল
- বেসোফিল
শ্বেত রক্তকণিকার আকার, আকৃতি ও জীবনকাল বিভিন্ন রকম হতে পারে। এদের সংখ্যা ৪০০০-১১০০০ ( প্রতি মি.লি. তে )। যার মধ্যে নিউট্রোফিল সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে। সাধারণত কোন জীবাণু সংক্রমণে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়।
শ্বেত রক্তকণিকার কাজ
- শ্বেত কণিকা জীবাণু প্রতিরোধ করে এবং দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
- যেকোন জীবাণু সংক্রমণ হলে শ্বেত কণিকা তা ধ্বংস করতে সাহায্য করে। দেহে শ্বেত কণিকা কমে গেলে বা শ্বেত কণিকার কার্যাবলি বাধাগ্রস্ত হলে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
অনুচক্রিকা
এটি সবথেকে ক্ষুদ্র রক্তকণিকা। এটির আকারও বিভিন্নরকম হতে পারে। এদের সংখ্যা ১.৫-৪.০ লক্ষ ( প্রতি মি.লি. তে )।
অনুচক্রিকার কাজ: অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। দেহের কোথাও কেটে গেলে অনুচক্রিকা সে স্থানে পরস্পর সংযুক্ত হয়ে রক্তনালীর ক্ষতস্থান বন্ধ করতে সাহায্য করে। অনুচক্রিকার সংখ্যা কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধাও বাধাগ্রস্ত হয়।
রক্তরস
রক্তের জলীয় অংশকে রক্তরস বলে। দেহে প্রায় ৩ লিটার রক্তরস থাকে। রক্তের প্রায় ৫৫% হল রক্তরস। রক্তরসে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব উপাদান মিশ্রিত থাকে। রক্তরসের উপাদান নিম্নরূপ-
জৈব যৌগ-
- অ্যামিনো এসিড
- গ্লুকোজ
- ফ্যাটি এসিড
- ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন
- বিভিন্ন হরমোন ইত্যাদি
অজৈব যৌগ-
বিভিন্ন ধাতব ও অধাতব মূলক তথা ধনাত্বক ও ঋনাত্বক আয়ন বিদ্যমান। যেমন-
ধনাত্বক-
- সোডিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- পটাসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি
ঋনাত্বক-
- ক্লোরাইড
- বাইকার্বোনেট
- ফসফেট
- সালফেট
রক্তরসের কাজ
- দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা।
- দেহ থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ পরিবহন করে তা নিষ্কাশন করা।
- অক্সিজেন ও কার্বন–ডাই-অক্সাইড পরিবহন করা। রক্তরসে মাত্র ৩% অক্সিজেন পরিবাহিত হয় কিন্তু প্রায় ৬৭% কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবাহিত হয়।
- হরমোন পরিবহন করা ইত্যাদি।